Africa Poem Lyrics In Bengali | Africa Kobita Rabindranath Tagore
Full Africa Poem Lyrics In Bengali by Rabindranath Tagore আফ্রিকা কবিতা / Udbhranta sei adim yuge / আফ্রিকা কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে Full Original Africa Poem – উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে, নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত, তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা-নাড়ার দিনে, রুদ্র সমুদ্রের বাহু প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে, ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে- আফ্রিকা, বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায় কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে। নিচে আফ্রিকা কবিতাটির পুরো লিরিক্স দেওয়া হলো এবং তার সাথে এই কবিতা সম্বন্ধে কিছু কথা/তথ্য সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
Africa Poem by Rabindranath Tagore Lyrics | আফ্রিকা কবিতা
আফ্রিকা (উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে) হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত একটি কবিতা, যা “পত্রপুট” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। এই কাব্যগ্রন্থে ১৮ টি কবিতা রয়েছে এবং এটি বাংলা ১৩৪৩ (ইংরেজি ১৯৩৬ খ্রীস্টাব্দে) সালে প্রকাশিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কাব্যগ্রন্থটি শ্রীমান কৃষ্ণ কৃপালিনী ও শ্রীমতী নন্দিতাকে তাঁদের শুভ পরিণয় উপলক্ষ্যে উৎসর্গ করেন।
এই “পত্রপুট” কাব্যগ্রন্থে থাকা কবিতাগুলি হল:-
- জীবনে নানা সুখদুঃখের এলোমেলো ভিড়ের মধ্যে
- আমার ছুটি চার দিকে ধু ধু করছে
- আজ আমার প্রণতি গ্রহণ করো, পৃথিবী
- একদিন আষাঢ়ে নামল
- সন্ধ্যা এল চুল এলিয়ে
- অতিথিবৎসল, ডেকে নাও পথের পথিককে
- চোখ ঘুমে ভোরে আসে
- আমাকে এনে দিল এই বুনো চারাগাছটি
- হেঁকে উঠল ঝড়
- এই দেহখানা বহন করে আসছে দীর্ঘকাল
- ফাল্গুনের বঙিন আবেশ
- বসেছি অপরাহ্নে পারের খেয়াঘাটে
- হৃদয়ের অসংখ্য অদৃশ্য পত্রপুট
- গো তরুণী
- ওরা অন্ত্যজ, ওরা মন্ত্রবর্জিত
- উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে
- যুদ্ধের দামামা উঠল বেজে
- কথার উপরে কথা চলেছ সাজিয়ে দিনরাতি
Africa Poem by Rabindranath Tagore In Bengali Lyrics | Africa Kobita Rabindranath Tagore
কবিতা: আফ্রিকা (উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে)
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: “পত্রপুট”
ভাষা: বাংলা
প্রকাশিত: বাংলা ১৩৪৩ সালে (ইংরেজি ১৯৩৬ খ্রীস্টাব্দে)
আরো পড়ুন:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী
Africa Poem by Rabindranath Tagore In Bengali Lyrics
উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে
স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে
নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত,
তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা-নাড়ার দিনে
রুদ্র সমুদ্রের বাহু
প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে
ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফ্রিকা,
বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়
কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে।
সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি
সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য,
চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত,
প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু
মন্ত্র জাগাচ্ছিল তোমার চেতনাতীত মনে।
বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে
বিরূপের ছদ্মবেশে,
শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে
আপনাকে উগ্র করে বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়
তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে।
হায় ছায়াবৃতা,
কালো ঘোমটার নীচে
অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ
উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।
এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে
নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,
এল মানুষ-ধরার দল
গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।
সভ্যের বর্বর লোভ
নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।
তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে
পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে;
দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়
বীভৎস কাদার পিণ্ড
চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।
সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায়
মন্দিরে বাজছিল পুজোর ঘণ্টা
সকালে সন্ধ্যায়, দয়াময় দেবতার নামে;
শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে;
কবির সংগীতে বেজে উঠছিল
সুন্দরের আরাধনা।
আজ যখন পশ্চিমদিগন্তে
প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস,
যখন গুপ্তগহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল,
অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল,
এসো যুগান্তরের কবি,
আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে
দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে,
বলো “ক্ষমা করো’–
হিংস্র প্রলাপের মধ্যে
সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।